মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্যা: বিনিয়োগের আগে যা জানা জরুরি

মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। এটি আপনার টাকা পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের হাতে তুলে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দেয়। তবে যেকোনো বিনিয়োগ মাধ্যমের মতো মিউচুয়াল ফান্ডেরও কিছু সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা জানা আপনার বিনিয়োগকে আরও কার্যকর ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সাহায্য করবে।

problem with mutual funds


মিউচুয়াল ফান্ডের সম্ভাব্য সমস্যাগুলো

নিচে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের প্রধান কিছু সমস্যার বিবরণ দেওয়া হলো:


১. বাজার ঝুঁকি (Market Risk)

মিউচুয়াল ফান্ডের কর্মক্ষমতা পুরোপুরি বাজারের ওঠানামার উপর নির্ভর করে। শেয়ারবাজার বা বন্ডবাজারের পতন হলে ফান্ডের মূল্য কমে যেতে পারে। এটি বিশেষত ইকুইটি-ভিত্তিক ফান্ডের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। খেয়াল রাখবেন মার্কেটে কোনো বাজে নিউজ এলে বড়সড় পতন হলে সেই প্রভাব তিব্রভাবে মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিও তে দেখতে পারবেন । এখন আপনার সেই সময়ে এমারজেন্সী টাকার প্রয়োজন হলে আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তুলতে চান - অনেক কম টাকা পাবেন । 


২. ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি (Management Risk)



মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করেন ফান্ড ম্যানেজার। তাদের দক্ষতার উপর ফান্ডের সাফল্য নির্ভর করে। যদি ম্যানেজার ভুল সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি আপনার বিনিয়োগে লোকসান গুনতে পারেন। বিভিন্ন সময়ে খবর আসে বড় বড় কোম্পানীর মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজাররা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েছেন, সেসব ক্ষেত্রে সেই ফান্ড থেকে লোকে দ্রুত টাকা তুলতে থাকে ফলে বাজার ভালো থাকলেও ফান্ড খতিগ্রস্থ হয় । আপনার ইনভেস্টমেন্টও কমতে থাকে । খবরে নজর রাখবেন , অযথা ভয় পাবেন না । 


৩. ফি এবং খরচ (Fees and Expenses)

মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরণের ফি এবং খরচ প্রযোজ্য হয়।  এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনা ফি (Expense ratio)  , লেনদেন খরচ, এবং অন্যান্য চার্জ। এই ফি বিনিয়োগকারীর মোট মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে। ফান্ড কেনার আগে অবশ্যই এগুলো দেখে নেবেন , ফান্ড অনুযায়ী এই প্রাইস কম বেশী হয় । সাধারনত ১% এর উপরে এক্সপেন্স রেসিও কে যথেষ্ট হাই মনে করা হয় । 


৪. তারল্য ঝুঁকি (Liquidity Risk)


সব মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে টাকা দ্রুত নগদায়ন করা সম্ভব নয়। বিশেষত ক্লোজড-এন্ড ফান্ড এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লকড ফান্ডে আপনার টাকা আটকে যেতে পারে। ট্যাক্স বাঁচানো ফান্ডের ক্ষেত্রে ৩ বছরের আগে ভাঙ্গা যাবেনা । অন্য ফান্ডের ক্ষেত্রেও একটা টাইম থাকে , যেমন ধরুন ৩০ দিনের মধ্য টাকা তুললে এক্সট্রা ১% দিতে হবে । সবকিছু ঠিক থাকলেও যেদিন টাকা তোলার জন্য রিকুয়েস্ট পাঠাবেন তার ২-৩ দিন পর টাকা আকাউন্টে পাবেন । ব্যাঙ্ক বা ন্যাশানাল হলিডে বা শনি ও রবি বার হলে আরো দু একদিন বেশী সময় লাগবে । এগুলো ভেবে চিন্তে দেবেন । 

৫. স্বচ্ছতার অভাব (Lack of Transparency)

বিনিয়োগকারীরা সব সময় জানেন না যে তাদের টাকা কোন খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারদের কার্যকলাপ এবং বিনিয়োগের কৌশল সম্পর্কে স্বচ্ছ তথ্যের অভাব দেখা যায়। সবসময় বিনিয়োগ করার আগে ফান্ডের ডিটেইলস গিয়ে কোন কোন কোম্পানীতে কত পরিমান ফান্ড জমা করা হচ্ছে সেটা চেক করে নেবেন । 


৬. কর সংক্রান্ত জটিলতা (Tax Implications)

মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সাধারণত করযোগ্য হয়। বিশেষত ক্যাপিটাল গেইন কর এবং ডিভিডেন্ড আয়ের উপর করের বিষয়টি বিনিয়োগের পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যাচুরিটি যদি এক বছরের আগেই নেন তাহলে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেনের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে ( ২০% ট্যাক্স)  আর ১ বছরের পর মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করলে লং টার্ম ক্যাপিট্যাল গেইনের জন্য ১২.৫% ট্যাক্স দিতে হবে যদি আপনার প্রফিট ১ লক্ষ টাকার বেশী হয় । 


৭. অতিরিক্ত বৈচিত্র্য (Over-Diversification)

মিউচুয়াল ফান্ডের প্রধান সুবিধা হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও। তবে, অতিরিক্ত বৈচিত্র্য কখনো কখনো আয়ের সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে পারে। এটি এমন হয় যখন একটি ভালো পারফর্মিং স্টকের মুনাফা অন্য স্টকগুলোর কারণে "ডাইলিউট" হয়।


৮. আয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব (Lack of Control Over Earnings)

বিনিয়োগকারীরা সরাসরি নির্ধারণ করতে পারেন না যে ফান্ড কীভাবে তার আয় বিতরণ করবে। ডিভিডেন্ড আয় বা ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে বিতরণ করা হলেও তা বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশার সঙ্গে মিল নাও খেতে পারে।


৯. স্বল্পমেয়াদী ঝুঁকি (Short-Term Risk)

মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ভালো। যদি আপনি স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করেন, তাহলে বাজারের অস্থিরতার কারণে আপনি প্রত্যাশিত মুনাফা নাও পেতে পারেন।


১০. অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন (Unforeseen Changes)

মিউচুয়াল ফান্ডের কাঠামো, ব্যবস্থাপনা দল বা বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন হলে তা বিনিয়োগকারীর জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।


সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যা করবেন

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

  • ফান্ডের প্রাসপেক্টাস এবং পারফরম্যান্স রিপোর্ট পর্যালোচনা করুন।
  • আপনার ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতা এবং আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
  • ফান্ড পরিচালনার ফি এবং অন্যান্য চার্জ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন।

মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা অনেক, তবে এর সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক তথ্য এবং কৌশলের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে আপনি ঝুঁকি কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে পারবেন।

আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনা সফল করতে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন, তবে বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে গবেষণা করতে ভুলবেন না।

মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্যা: বিনিয়োগের আগে যা জানা জরুরি মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্যা: বিনিয়োগের আগে যা জানা জরুরি Reviewed by Wisdom Apps on নভেম্বর ২২, ২০২৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.