ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা: ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী
১. সাংবিধানিক ক্ষমতা (Constitutional Powers)
রাষ্ট্রপতি ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান প্রতীক। তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা দেশ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
- আইন প্রণয়ন: সংসদে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না।
- সংসদ ভঙ্গ ও আহ্বান: তিনি সংসদের অধিবেশন আহ্বান বা ভঙ্গ করতে পারেন।
- জরুরি অবস্থা ঘোষণা: সংবিধানের ৩৫২, ৩৫৬ এবং ৩৬০ ধারায় তিনি জাতীয়, রাষ্ট্রিক বা আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
- শপথবাক্য প্রদান: প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির।
২. কার্যনির্বাহী ক্ষমতা (Executive Powers)
রাষ্ট্রপতির কার্যনির্বাহী ক্ষমতা দেশের প্রশাসনিক কার্যাবলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
- প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ: সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করা হয়।
- গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ: সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, রাজ্যপাল, সেনাপ্রধান প্রমুখ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন।
- পরামর্শ গ্রহণ: তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শে কাজ করেন, তবে কিছু বিষয়ে নিজের বিবেচনা ব্যবহার করতে পারেন।
৩. বিচারিক ক্ষমতা (Judicial Powers)
রাষ্ট্রপতির বিচারিক ক্ষমতা তাঁকে জাতির ক্ষমাশীল নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে:
- ক্ষমা ঘোষণা: রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ড সহ বিভিন্ন শাস্তি মকুব করতে পারেন।
- আবেদন গ্রহণ: উচ্চ আদালতে পেন্ডিং কেসগুলির জন্য আবেদন গ্রহণ করতে পারেন।
৪. জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা (Emergency Powers)
জরুরি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন:
- জাতীয় জরুরি অবস্থা: দেশের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক বিপদের সময় তিনি ৩৫২ ধারা অনুসারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
- রাষ্ট্রপতি শাসন: ৩৫৬ ধারা অনুসারে রাজ্যে প্রশাসনিক বিপর্যয় ঘটলে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করতে পারেন।
- আর্থিক জরুরি অবস্থা: দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় ৩৬০ ধারা প্রয়োগ করা হয়।
৫. প্রতীকী ক্ষমতা (Symbolic Powers)
রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতীকী প্রধান। তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বাগত জানানো এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা রাখেন।
উপসংহার
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গভীর প্রভাব ফেলে। যদিও তাঁর বেশিরভাগ ক্ষমতা প্রতীকী, তবুও জরুরি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি কার্যত ভারতীয় গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেন। সংবিধানের এই সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদটি দেশের স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
কোন মন্তব্য নেই: