ভারতীয় সমাজে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে যদি এই সম্পর্ক ভাঙনের মুখোমুখি হয় এবং কোনো স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি সামনে আসে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া একজন স্বামীর অধিকার। ভারতীয় আইন অনুসারে, এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট কাঠামো রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের ন্যায্যতা সুনিশ্চিত করে।
পরকীয়া প্রেম ও ভারতীয় আইন
ভারতে ২০১৮ সালের আগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, পরকীয়া প্রেম একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই ধারাটিকে বাতিল করেছে এবং সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, পরকীয়া প্রেম শুধুমাত্র বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি হতে পারে, তবে এটি ফৌজদারি অপরাধ নয়। এই রায় অনুযায়ী:
- পরকীয়ায় অপরাধমূলক শাস্তি নেই:৪৯৭ ধারা বাতিল হওয়ায়, এখন পরকীয়ার জন্য স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা সম্ভব নয়। ফৌজদারি মামলা কি ? এটা হল আইন লঙ্ঘনের কারণে দায়ের করা মামলা, যেখানে অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা রাষ্ট্র অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। এতে সাধারণত হত্যা, চুরি, প্রতারণা, বা শারীরিক আঘাতের মতো গুরুতর অপরাধ অন্তর্ভুক্ত হয়। ফৌজদারি মামলার তদন্ত পুলিশের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং অপরাধ প্রমাণ হলে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়। এ ধরনের মামলায় অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব প্রসিকিউশনের উপর থাকে। শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড, জরিমানা, বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্ত ;পরকীয়ায় এখন আর ফৌজদারি শাস্তি নেই ।
- বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি:যদি স্বামী মনে করেন যে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের কারণে বিবাহ অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে, তবে তিনি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। কিন্ত বিবাহ বিচ্ছেদ করার জন্য কি কি করতে হবে জেনে নিন -
স্বামীর করণীয়
যদি স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম ধরা পড়ে, তাহলে স্বামী নিম্নলিখিত আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন:
১. বিবাহবিচ্ছেদ মামলা দায়ের করুন:
ভারতীয় বিবাহ আইন (Hindu Marriage Act, 1955 বা Special Marriage Act, 1954 অনুযায়ী) অনুযায়ী, “পরকীয়া” বা বিবাহের বাইরে সম্পর্ক বিবাহবিচ্ছেদের জন্য একটি বৈধ কারণ। এই প্রক্রিয়ায়:
- তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ: স্ত্রীর পরকীয়ার যথাযথ প্রমাণ, যেমন চ্যাটের স্ক্রিনশট, কল রেকর্ড, বা সাক্ষীর বিবৃতি।
- আইনি পরামর্শ গ্রহণ: একজন দক্ষ আইনজীবীর সাহায্যে কোর্টে আবেদন করা।
২. যৌথ সম্পত্তি ও সন্তানের অধিকার নিয়ে লড়াই করুন:
- যদি বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তাহলে যৌথ সম্পত্তি এবং সন্তানের হেফাজত নিয়ে স্বামীর অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
- কোর্ট সন্তানের হেফাজত নির্ধারণে সন্তানের মঙ্গলকে প্রাধান্য দেয়।
৩. মানসিক নির্যাতনের মামলা দায়ের করুন:
পরকীয়া প্রেমের ফলে যদি মানসিক বা সামাজিক অপমান ঘটে, তাহলে Domestic Violence Act, 2005 অনুযায়ী স্বামী মামলা করতে পারেন।
Domestic Violence Act, 2005 হল একটি ভারতীয় আইন যা ঘরোয়া নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করে। এই আইনে, শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক এবং মানহানিকর আচরণকে ঘরোয়া নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্যাতিত মহিলা আইনি সাহায্য পেতে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। আইনটি মহিলাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, যেমন পিআরওটেকশন অর্ডার, রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার এবং অন্যান্য সহায়তা। এটি মহিলাদের জন্য নিরাপত্তা এবং সহায়তার পথ খুলে দেয়, যাতে তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে পারে।
৪. মধ্যস্থতার চেষ্টা করুন:
বিবাহবিচ্ছেদের আগে যদি উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে চান, তাহলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।
পরামর্শ ও সতর্কতা
- আইনি পরামর্শ নিন: কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
- তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করুন: আদালতে কোনো অভিযোগ তুলে ধরার আগে সঠিক প্রমাণ থাকা অপরিহার্য।
- সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করুন: সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব না পড়ে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।
- মীমাংসার চেষ্টা করুন: বিচ্ছেদের চেয়ে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অনেক সময় মঙ্গলজনক হতে পারে।
উপসংহার
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, পরকীয়া প্রেম এখন আর অপরাধ হিসেবে গণ্য না হলেও এটি বিবাহবিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করা উচিত।
কোন মন্তব্য নেই: