মুসলিম নিকাহ ও তালাকের সব নিয়ম কানুন - মুসলিম ম্যারেজ ল - Muslim Marriage Law

muslim nikah law


মুসলিম বিবাহ বা নিকাহ মুসলিম বিবাহ বা নিকাহ


বিয়ে বা নিকাহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান . এটি হল নরনারীর বৈধ মিলন সম্পর্ক ও বৈধ সন্তানের জন্মদানের ও পালনের জন্য শরীয়ত সম্মত এক বিশেষ চুক্তি। মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন রকম আচার বিচার বা নিয়ম 'মুসলিম পার্সোনাল ল' (মুসলিম ব্যাক্তিগত আইন ) দ্বারা পরিচালিত হয়। এগুলিকে শরিয়তী আইন বলা হয় । শিয়া মুসলিমরা 'ইথনা আশারি' মতে নিকাহ করেন ; সুন্নিরা করেন হানাফি মতে । এ ছাড়াও, আরও ভাগ আছে। Guided by Mohamedan Laws.


মুসলিম বিয়ের যােগ্যতা -

(ক) কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমান ছেলে বা মেয়ে যার যৌবনারম্ভ হয়েছে (সাধারণভাবে ১৫ বছর) সে বিয়ের | চুক্তি করতে পারে ।

(খ) মুসলিম মেয়ের বয়স ১৫ বছর হলে এবং রজোদর্শন হলে বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই সমকুফুতে বিয়ে

করতে পারে ।

(গ) সুস্থ মস্তিষ্ক এবং যৌবপ্রাপ্ত হলে ছেলে মেয়েদের নিজস্ব মত ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়।


বৈধ নিকাহর নিয়ম

(১) এক তরফ প্রস্তাব দেবেন, অন্য তরফ তা গ্রহণ করবেন।

(২) প্রস্তাব দেওয়া-নেওয়া একই দিনে, একই অনুষ্ঠানে হবে ।

(৩) প্রস্তাব মৌখিক কিম্বা লিখিত, দুটোই চলবে ।

(৪) সাক্ষীদের সামনে মৌলবী নিকাহ সম্পন্ন করবেন।

(৫) ইচ্ছা করলে নিকাহ রেজিষ্ট্রি খাতায় বর-কনে ও সাক্ষীদের নাম-ধাম লিখে, মৌলবী সহ সকলকে সই করাবেন।

(৬) প্রস্তাব ও চুক্তি লিখিত হলে, সেই দলিল বা নিকাহনামায় সকলের সই থাকবে, তারিখ সহ ।

(৭) নিকাহর সময় বর উপযুক্ত পরিমাণ নিকাহনামা/কাবিলনামা, বিয়েতে অপরিহার্য টাকা দেবে কনেকে, বা । দেবার 'পণ করবে। সেই ‘মেহর' এর পরিমাণ মৌলবীর রেজিষ্ট্রি খাতা ও নিকাহনামাতে লেখা থাকতে পারে। প্রয়ােজন ; শিয়াদের ক্ষেত্রে সাক্ষীর উপস্থিতি প্রয়ােজন নয় ।

(৮) সাক্ষীর উপস্থিতি : সুন্নিদের ক্ষেত্রে দুজন সুস্থমস্তিষ্ক মুসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার থাকা প্রয়োজন । শিয়াদের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের উপস্থিতি প্রয়োজন নয় ।


কোরানের নির্দেশঃ

কোরানের সুরা নিসা ও সুরা বাকারায় নিকাহ বিষয়ে নির্দেশ আছেঃ

‘স্বামীর মৃত্যর পর বিধবাদের চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করা আবশ্যক। তারপর সড়ক কোন দোষ নেই।



হাদীসের নির্দেশ

হাদীসে বলা হয়েছে : বিধবা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের তাদের সম্মতি ব্যতীত বিয়ে হবে না এবং কুমারী কন্যাদের সম্মতি না চাওয়া পর্যন্ত তাদের বিয়ে দেওয়া যাবে না।।

মুসলিম পার্সোনাল ল’বাের্ড ২০০৫ সালে নিকাহনামার খসড়ায় জানিয়েছেন যে পুরুষের একাধিক বিবাহ শরিয়তী আইন সম্মত। তবে স্বামীর উচিত সব স্ত্রীর সঙ্গে সমান আচরণ করা, সমান মর্যাদা দেওয়া।


মুসলিম বিয়ে বৈধ (শাহী) অবৈধ (বাতিল) হতে পারে।


মুসলিম বিয়ে বাতিল হওয়ার কারণ :

(ক) যেখানে সাক্ষীর উপস্থিতি মহমেডান আইন অনুযায়ী আবশ্যিক সেখানে সাক্ষী না থাকলে বিয়ে বিধি সম্মত হবে না।

(খ) একজন মুসলমান ব্যক্তির একই সময়ে চারজন স্ত্রী থাকতে পারে । পঞ্চম বিয়ে করলে, সেটি অনিয়মিত। .

(গ) একজন মুসলমান মহিলার এক সময়ে একজনমাত্র স্বামী থাকতে পারে । স্বামী জীবিত এবং বিচ্ছেদ হয়নি এমন মহিলা যদি বিয়ে করেন তবে তা বাতিল হবে।

(ঘ) ধর্মীয় নিয়ম পালিত হয়নি, অর্থাৎ কোনও মুসলিম মহিলা ইদ্দত কালের (বিচ্ছেদের পর ৩ মাসের ঋতুকাল) ভিতরে বিয়ে করলে সেই বিয়ে অনিয়মিত কিন্তু বাতিল নয়। সন্তানের বৈধতা ও পিতৃত্ব সাব্যস্ত করার জন্যই এই নিয়ম। |

(ঙ) কোনও মহিলা বিধবা হলে অথবা বিবাহবিচ্ছেদ হলে বিয়ে যৌনমিলন দ্বারা সম্পূর্ণ হােক বা না হােক তাকে ‘ইদ্দত' সময়কাল মানতেই হবে । এই ইদ্দতকাল চার মাস দশ দিন । সে সময়ে গর্ভবতী থাকলে সন্তান না জন্মাননা পর্যন্ত আবার বিয়ে করা যাবেনা । কিন্তু বিয়ে হলেও যৌনমিলন না, হলে তাকে ইদ্দত সময়কাল মানতে হবে না। সে সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে করতে পারে ।

(চ) সুন্নি মুসলিম ছেলে মুসলিম, ইহুদী বা খৃষ্টান মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু কোনও অকিতাবিয়াকে (অর্থাৎ হিন্দু, যারা মূর্তি পূজা করে অথবা অগ্নি উপাসক) বিয়ে করলে তা বাতিল হবে। শিয়া মুসলিম ছেলে 'কিতাবিয়া' কে বিয়ে করলে তা বাতিল হবে।

(ছ) একজন মুসলিম মেয়ে শুধুমাত্র একজন মুসলিম পুরুষকেই বৈধভাবে বিয়ে করতে পারে।

(জ) নিষিদ্ধ সম্পর্কের আওতায় পড়লে অর্থাৎ মা বা ঠাকুমা । দিদিমা, মেয়ে বা নাতনী, নিজের বােন অথবা অন্য প্রকারে রক্তের সম্বন্ধযুক্ত, ভাইঝি, পালিত কন্যা, স্ত্রীর গর্ভজাত কন্যা ইত্যাদির সঙ্গে বিয়ে অবৈধ বা বাতিল বলে গণ্য হবে।



মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ

মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) মুসলিম পার্সোনাল ল (মুসলিম ব্যক্তিগত আইন) অর্থাৎ শরিয়তী আইন অনুযায়ী। হয়ে থাকে।

তালাক - মুসলিম আইনে তালাক মানে বিয়ের চুক্তি থেকে রেহাই দেওয়া ।


স্বামী বিবাহ বিচ্ছিন্ন করতে পারেন তিনভাবে - ১) তালাক, ২) ইলা, ৩) জিহার।


মৌখিক তালাক

(ক) প্রাপ্ত বয়স্ক শিয়া মুসলিম স্বামী স্বেচ্ছায় মৌখিকভাবে তালাক দিতে পারেন - অন্তত দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। (যদি বােবা হন তাহলে অন্য কেউ তার হয়ে তালাক দিতে পারে)।

(খ) প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কের সুন্নি স্বামী কোনাে কারণ না দেখিয়ে মাতাল বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় বা প্রতারণা

করেও তালাক দিতে পারেন। স্ত্রীর দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদকে বলা হয় তালাকেতাফইদ।


তালাক :

যদি কেউ স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না চায় তাহলে চার মাস অপেক্ষা করা উচিত – ইহাকে শরীয়ত পরিভাষায় ইলা বলে, এবং এতে এক তাল্লাকে বায়েন পতিত হবে চারমাস কাল পূর্ণ করলে। তার মধ্যে তাদের পুনর্মিলন হলে ভালাে। কিন্তু তারা যদি বিচ্ছেদের জন্য দৃঢ়সংকল্প হয় তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে। তবে তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন মাসিক ঋতু কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। গর্ভবতী হয়েছে কিনা দেখা জরুরী।

'এই অপেক্ষার কাল পার হওয়ার পর যদি তারা উভয়ে সুবিবেচনার সঙ্গে মিলিত হতে সম্মত হয় তবে তাদের পুনর্বিবাহে বাধা দেওয়া ঠিক নয়'।

হয় দুই তালাকের পর সুবিবেচনার সঙ্গে স্ত্রীকে গ্রহণ কর, না হয় সুবিবেচনার সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে তাকে বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্তি দাও'।

‘দুগ্ধ পােষ্য শিশুর পিতা-মাতার মধ্যে তালাক হলে মাতা পূর্ণ দুই বছর শিশুকে স্তন্যদান করবে এবং পিতা শিশু ও মাতা উভয়েরই ভরণ পােষণের ভার গ্রহণ করবে।

'পূর্ণ তালাকের পর স্বামী যদি স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে চায় তাহলে সেই স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হওয়ার পর তালাক পেলে তবেই তা সম্ভব হবে। মুসলিম পার্সোনাল ল বাের্ড ২০ ডিসেম্বর ২০০৪এ ঘােষণা করেছেন যে ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানের উচিত ‘তিন তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকা। .



বিভিন্ন ধরণের তালাক -

(ক) সব থেকে উন্নত ধরণের তালাক হল তালাক-উস-সুন্নত, হয় আহসান (শ্রেষ্ঠ) বা হাসান (ভালাে) পদ্ধতিতে দেওয়া।

(খ) তালাক-উল-বিদ্দত ও শিয়া ও মালিকি মতে এটি খুবই খারাপ ধরণের পাপ, যদিও হানাফিদের মধ্যে এর চল খুবই বেশি। সুন্নি আইনেও এটি পাপ বলে গণ্য, তবুও সামাজিকভাবে মেনে নেওয়া হয়।



আপসরফা দ্বারা বিবাহবিচ্ছেদ

খুলা – স্ত্রীর প্রস্তাব বা অনুরােধে ও টাকা বা সম্পত্তির বিনিময়ে, স্বামী তার দাম্পত্যের অধিকার ও স্ত্রীর উপর কর্তত পরিহার করবে, এক অর্থে স্ত্রী তার মুক্তি বা বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার মূল্য দিয়ে কিনছেন । এই মূল্য দেবার কথা দিয়ে ছাড় পাবার পর যদি স্ত্রী কথা না রাখেন , তবে সেই বিচ্ছিন্ন স্বামী সম্পত্তি বা টাকা আদায় করার জন্য কাজীর বিচার চাইতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ কিন্তু বহাল থাকবে ।

মুবারত - অর্থাৎ আপস রফা - এ ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ প্রথম প্রস্তাব দিতে পারেন। কোনাে লেন-দেনের প্রশ্ন থাকে না। এই ধরণের বিচ্ছেদ ও পাকাপাকি হয়ে যায়, ইদ্দত কাল পালন করতে হয়, ও স্বামীর ক্ষেত্রে খােরপােষের দায়িত্ব থাকে।


মুসলিম মহিলাদের জেনে রাখা ভালাে যে উলেমারা ফতােয়া দিয়েছেন যে হানাফি মতে এ মামলা অসম্ভব হলেও মালিকী আইনে এ মামলা হতে পারে। অতএব, অধর্মের ভয় নেই।


মুসলিম নিকাহ ও তালাকের সব নিয়ম কানুন - মুসলিম ম্যারেজ ল - Muslim Marriage Law মুসলিম নিকাহ ও তালাকের সব নিয়ম কানুন -  মুসলিম ম্যারেজ ল - Muslim Marriage Law Reviewed by Wisdom Apps on অক্টোবর ২৪, ২০২২ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.