বিড়ি এবং সিগার শ্রমিক (নিয়ােজনের শর্তাবলী) আইন, ১৯৬৬
বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেখানে বিড়ি এবং সিগার শ্রমিকরা কাজ করেন, তা খুবই অসন্তোষজনক। যদিও কারখানা। আইন, ১৯৪৮ এই ক্ষেত্রগুলির ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য, কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই মালিক বা মালিকপক্ষ এই নিয়মগুলি মেনে চলেন না এবং কাজের ক্ষেত্রগুলিকে ছােট ছােট ভাগে ভাগ করে দেন।
অসংঘটিত বিড়ি শ্রমিক সমস্যা ও আইন
বিড়ি শ্রমিক যাঁরা বিড়ি বানান তারা ঠিকাদারদের থেকে কাজের বরাত নেন এবং নিজেদের বসত বাড়িতেই কাজ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ীর মেয়েরাই এই কাজ করে থাকেন। এই কাজের জন্য কাঁচামাল তারা পান হয় মালিক বা মালিক পক্ষের কাছ থেকে, না হয় ঠিকাদারদের কাছ থেকে। এই শ্রমিকরা বিশেষ করে মহিলারা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক হওয়ায় নিজেদের দাবি ও সুযােগ-সুবিধা আদায়ে সক্ষম নন। একটি কি দু’টি রাজ্য সরকার এই ধরণের শ্রমিকদের কাজের অবস্থার উন্নতি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ আইন পাশ করেছেন। কিন্তু এই আইন তারা আজও বলবৎ করতে সক্ষম হননি। এই ধরণের অবস্থার মধ্যে যেসব শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হন তাদের কথা মাথায় রেখে, এই বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বর্তমানের ‘বিড়ি এবং সিগার শ্রমিক বিল (নিয়ােজনের শর্তাবলী) ১৯৬৬ সালের ৩০ শে নভেম্বর, পার্লামেন্টে গৃহীত এবং অনুমােদিত হয়। ১৯৯৩ সালে এই আইনটি সংশােধিত হয় এবং ‘বিড়ি এবং সিগার শ্রমিক (নিয়ােজনের শর্তাবলী) আইন, ১৯৯৩' নামে পরিচিত হয়।
কোন মালিক এই আইনের অধীনে উপযুক্ত লাইসেন্স ছাড়া বিড়ি/সিগারের কারখানা হিসাবে কোন স্থানকে ব্যবহার করতে পারবেন না। কোন স্থান বা ঘরবাড়িকে বিড়ি/সিগার তৈরীর শিল্পতালুক হিসাবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। ঐ দরখাস্তে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন্ সময়ে সর্বাধিক কতজন শ্রমিককে কাজে লাগানাে হবে এবং সেই সঙ্গে ঐ স্থান বা ঘর বাড়ির যথাবিহিত নকশাও পেশ করতে হবে। এই আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ - • রাজ্য সরকার সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি ঘােষণার মাধ্যমে এমন কোন আধিকারিককে ইন্সপেক্টর হিসাবে নিয়ােগ করতে পারেন, যাকে রাজ্য সরকার এই কাজের উপযুক্ত বলে মনে করেন এবং তার ওপর স্থানীয় কর্তৃত্ব অর্পণ করতে পারেন। এর সঙ্গে সঙ্গে সেই আধিকারিককে যে এলাকা জুড়ে কাজ করতে হবে তার স্থানীয় সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।।
• কোন শ্রমিক বা কোন ব্যক্তি যদি এই আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে কোন ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযােগ জানান, তাহলে সেই ইন্সপেক্টর ঐ বিষয়ে তদন্ত করতে পারবেন এবং তিনি কখনও-ই অভিযােগকারী/কারিণীর নাম তিনি না চাইলে কাউকে/কোথাও জানাবেন না।
• কোন ব্যক্তিকে এমন কোন প্রশ্ন করা বা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না যা তার বিরুদ্ধে যেতে পারে। এমনকি, অভিযােগের ওপর নির্ভর করে যদি কোন ইন্সপেক্টর অভিযুক্ত মালিক বা মালিক পক্ষ বা ঠিকাদার বা তাদের কোন প্রতিনিধিদের অফিসে বা কারখানায় এই আইনের বলে পরিদর্শনের জন্য যান, তাহলেও সেই ইন্সপেক্টর কাউকে জানাবেন না যে তিনি কোন অভিযােগের ভিত্তিতে এই পরিদর্শন করছেন।
• যদি ইন্সপেক্টরের সন্দেহ হয় যে মালিক এই আইন কোন ভাবে লঙঘন করে কারখানা চালাচ্ছেন তাহলে তিনি নােটিশ দিয়ে মালিকের অনুপস্থিতিতেও ঐ স্থানে প্রবেশ করতে পারেন। এই আইনের অধীনে এমন কোন বিভাগ/উপধারা নেই, যার মাধ্যমে কোন অভিযােগকারী/কারিণী তার নাম জানানাের জন্য অনুমতি দিতে পারে বা অভিযােগকারী/কারিণীর কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া যেতে পারে।
বিড়ি বা সিগার কোম্পানীর মালিকের দায়িত্ব
• কোন নর্দমা, শৌচাগার থেকে কোনরকম দুর্গন্ধ যাতে না আসে এজন্য পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করতে হবে।
• কারখানার প্রতিটি ঘরে খােলা হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে।
• তাপমাত্রা যাতে অস্বস্তি ও অসুস্থতার কারণ না হয়, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
• কর্মীদের কাজ ও চলাফেরার সব জায়গায় যথেষ্ট আলাে থাকা চাই।
• যে সব কারখানায় বিড়ি বা সিগারেট তৈরির প্রক্রিয়ায় এমন জিনিস তৈরি হয় যাতে বিষাক্ত ধোয়া বা ধুলোর মতাে গুড়াে বা অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর জিনিস হাওয়ায় ছড়িয়ে যায়, সে সব জায়গায় কর্মীদের নাকে-চোখেমুখে যাতে তা না ঢুকে যায় তার জন্য মালিক বা মালিক পক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
• কারখানার বিভিন্ন জায়গায়, কর্মীদের সহজ নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্যকর পরিশ্রুত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
• পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের জন্য কারখানা চত্বরে আলাদা আলাদা শৌচাগার থাকবে । ঠিক হবে কতগুলাে কলঘর প্রয়ােজন। এগুলাের ডিজাইন থেকে মেরামতি ও নিয়মিত সাফাই ব্যাবস্থায় কোনরকম ঢিলে দেওয়া বা গাফিলতি চলবে না। মালিক বা মালিক পক্ষকে এক্ষেত্রে শ্রমিকদফের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
• প্রতিটি কারখানা চত্বরে, বিশেষ করে যেখানে তামাক মেশানাে ও ঘঁকা হয় অথবা যেখানে গরম তাওয়ায় বিড়ি সেঁকা হয়, সেখানে শ্রমিকদের জন্য মালিক বা মালিকপক্ষ অবশ্যই হাত-মুখ ধােয়ার জায়গার ব্যবস্থা করবেন ।
• যেখানে ত্রিশজনের বেশি মহিলা কাজ করেন সেখানে তাদের ৬ বছরের নীচে শিশুদের দেখভালের জন্য ঘরের ব্যবস্থা থাকবে।
- এর তত্ত্বাবধান যারা করবেন তাদের ঠিকমতাে ট্রেনিং থাকা চাই।
- খাওয়া-দাওয়া,কাপড়জামা বদলানাে ও কাচার ব্যবস্থাও থাকবে।
- জায়গাটিতে যথেষ্ট আলাে ও হাওয়া থাকবে।'
- বিনামূল্যে বাচ্চাদের জন্য দুধ ও অন্যান্য খাদ্যের ব্যবস্থা থাকতে পারে।
- মায়েদের অনুমতি থাকবে ঠিক সময়ে শিশুদের খাইয়ে যাওয়ার।
• প্রত্যেক কারখানা চত্বরে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।
• কোন কর্মীকে দিয়ে দিনে নয় ঘন্টা এবং সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘন্টার বেশি কাজ করানাে যাবে না।
• কোন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মী (১৮ বছর বয়সের উপর) কোন খারখানায় নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কাজ করলে তা ‘ওভারটাইম' হিসাবে ধরা হবে এবং সেই অনুযায়ী ‘ওভারটাইম’-এর রেটে টাকা পাবেন। এক্ষেত্রেও কাজের সময় কখনােই দিনে দশ ঘন্টা এবং সপ্তাহে চুয়ান্ন ঘন্টার বেশি হবে না।
• কোন কারখানায় যারা ওভারটাইম কাজ করেন তাদের এই বাড়তি সময়ের জন্য দ্বিগুণ রেটে মাইনে দিতে হবে।
• যাঁরা “পীস-রেটে কাজ করেন, তাদের সারাদিনের রােজগার বেতনের হার হিসাবে ধরতে হবে। অর্থাৎ সারাদিন কাজ করলে একজন কর্মীর যা মাইনে হয়, সেই রেটে উক্ত কর্মীর ওভারটাইমের বেতনের হিসেব ধরতে হবে।
• পাঁচঘন্টা কাজ করার পর অন্ততঃ আধ ঘন্টা বিশ্রামের সময় সমস্ত কর্মীকে দিতে হবে।
• বিশ্রামের সময় সমেত সাড়ে দশ ঘন্টার বেশি একদিনে কোন কর্মীকে দিয়ে কাজ করানাে চলবে না। তবে মুখ্য পরিদর্শক যদি নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে লিখিত কোন নির্দেশ জারি করেন তাহলেও কাজের নির্ধারিত সময় মােট বারাে ঘন্টার বেশি হবে না।
• সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কারখানা পুরাে ছুটি থাকবে। মালিক বা মালিক পক্ষকে আগে থেকে কারখানা চত্বরে সবার নজরে পড়বে এমন জায়গায় নােটিস দিয়ে ছুটির দিন সম্বন্ধে সবাইকে নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে। এই ছুটির দিনটি মালিক বা মালিক পক্ষ যখন তখন বদলাতে পারবেন না। যদি কেউ বদলাতে চান তাহলে আগে মুখ্য পরিদর্শকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই বদলাতে পারবেন এবং তিনমাসের মধ্যে মাত্র একবার এইভাবে দিন বদলানাে যাবে।
বিঃ দ্রঃ যখন বিড়ি বা তামাকের পাতা ভিজানাের কাজ চলবে, তখন সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হতে পারে। তবে এর পরিবর্তে সপ্তাহের অন্য কোন দিন ছুটি দিতে হবে।
• মহিলা এবং কমবয়সী ছেলেমেয়েরা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যে ৭টার মধ্যেই শুধু কাজ করতে পারবে, তার বাইরে নয়।
• ১৪ বছরের নীচে কাউকে এই কারখানায় নিয়ােগ করা যাবে না।
• প্রতি কর্মী এক বছরে বেতনসমেত ছুটি পাওয়ার যােগ্য ও
ক) প্রাপ্তবয়স্ক হলে - কুড়ি দিন কাজ মানে একদিন ছুটি।
খ) কমবয়সী হলে - পনের দিন কাজ মানে একদিন ছুটি।
• মালিকের আবেদন সাপেক্ষে কারখানা চত্বরের বাইরে পাতা ভেজানাে বা কাটার জন্য সরকার বিশেষ অনুমতি দিতে পারেন।
• কোন মালিক বা মালিক পক্ষ কোনরকম যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোন কর্মীকে, যিনি অন্ততঃ ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে কাজ করছেন, হঠাৎ করে ছাঁটাই করতে পারেন না। এক্ষেত্রে অন্ততঃ একমাসের নােটিশ উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে দিতে হবে।
• অবশ্য যদি কোন কর্মীর বিরুদ্ধে এই মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় যে সে দোষী এবং অশােভন আচরণে অভিযুক্ত এবং মালিক বা মালিক পক্ষ তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে যে তথ্য পেয়েছেন তা উক্ত কমাকে ছাঁটাই করার পক্ষে যথেষ্ট, তাহলে সেই কর্মীকে ছাঁটাইয়ের জন্য কোন নােটিশ দেওয়ার দরকার নেই।
• ছাঁটাই হলে শ্রমিক যথাযােগ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে পারে যে, কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই মালিক তাকে ছাঁটাই করেছে।
এই আইন না মানার শাস্তি ( কারখানার মালিকের জন্য )
এই আইনের কোন ধারা কেউ লঙঘন করলে অথবা আপিল-কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী মজুরি বা ক্ষতিপূরণ দিলে, প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং পরবর্তী অপরাধের ক্ষেত্রে একমাস থেকে তিনমাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা একশাে টাকা থেকে পাঁচশাে টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দুটোই একসঙ্গে হতে পারে। আপিল- কর্তৃপক্ষের নির্দেশানুযায়ী কোন মালিক যদি শ্রমিককে পুনরায় কাজে নিযুক্ত না করেন তাহলে ২৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
জেনে রাখা দরকার
উপরিউক্ত আইনের অধীনে কোন শ্রমিক যদি কোনরকম অন্যায়ের শিকার হন বা মালিক বা মালিক পক্ষ যদি কোন নিয়ম লঙ্ঘন করেন তাহলে শ্রমিকরা মুখ্য পরিদর্শকের কাছে অভিযােগ জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই: